জুলাই হত্যাকাণ্ড: ১০৫৯ পুলিশ আসামি, গ্রেপ্তার ৪১
ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: দেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত ঘটনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে ১০৫৯ জন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা: গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ-আল মামুন, এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, যুগ্ম কমিশনার মশিউর রহমান, উপমহাপরিদর্শক মোল্যাহ নজরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম।
অনেকেই পলাতক: সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, এবং অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের মতো বেশ কয়েকজন বিতর্কিত কর্মকর্তা মামলার আসামি হওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের অনেকেই দেশের বাইরে পালিয়েছেন।
মামলার সংখ্যা: পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে মোট ১৩৯৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫৬টি মামলা হত্যা সংক্রান্ত এবং ৭৩৭টি মামলা আহতদের নিয়ে দায়ের হয়েছে।
তদন্ত ও বিচার: নতুন আইজিপি বাহারুল আলম জানিয়েছেন, এই মামলাগুলোর তদন্তে আটটি রেঞ্জের প্রতিটিতে একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সাবেক ও বর্তমান অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সহায়তায় তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে। পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, তদন্তে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা হবে এবং নিরপরাধদের হয়রানি করা হবে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে স্বজনহারানো পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালে পুলিশ বাহিনীর তৎকালীন ১৮ জন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার কর্মকর্তারা: ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা, পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন, মহিউদ্দিন ফারুকী, আবদুল মান্নান, এস এম তানভীর আরাফাতসহ আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে আটক রয়েছেন।
উচ্চপদস্থদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ মামলা: পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১৭৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর পরেই রয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যার বিরুদ্ধে ১৫৯টি মামলা হয়েছে।
সাবেক আইজিপি নুরুল হুদার মতামত: পুলিশের সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেছেন, "এই মামলাগুলোর দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। নিরপরাধদের হয়রানি করা উচিত নয়, তবে অপরাধীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা উচিত।"