সারা দেশে ২৪/৭ সরকারি ফার্মেসি চালু হচ্ছে: কমবে চিকিৎসা ব্যয়
সরকার ওষুধ সহজে মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে সারা দেশে ‘ফার্মেসি নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রথম ধাপে দেশের ৭০০টি সরকারি হাসপাতালে আধুনিক ফার্মেসি চালু হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ সহজলভ্য করার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয়ও কমিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এই ফার্মেসিগুলো উপজেলা হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে চালু হবে। বড় শহরগুলোতেও বাড়ি ভাড়া নিয়ে এই ফার্মেসি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এসব ফার্মেসি সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। তবে বেসরকারি ফার্মেসিগুলোর কার্যক্রম আগের মতোই চলবে।
স্বাস্থ্য খাতসংক্রান্ত বিভিন্ন সভা ও নীতিগত আলোচনায় এই ফার্মেসি নেটওয়ার্কের প্রস্তাব গুরুত্ব পেয়েছে। স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিটির খসড়া সুপারিশেও বিষয়টি উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সব ওষুধসহ একটি ফার্মেসি থাকতে হবে, যেখানে কাজ করবেন প্রশিক্ষিত ও রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্টরা। তারা শুধু ওষুধ দেবেন না, রোগীকে ওষুধ ব্যবহারের সঠিক পরামর্শও দেবেন।
এই ফার্মেসিগুলোতে তিন ধরনের ওষুধ থাকবে: একাংশ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, কিছু ভর্তুকিতে, আর কিছু বাজার মূল্যে। ডিজিটাল সিস্টেমে ওষুধ বিতরণ ও নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে, যা অপচয় রোধ ও চাহিদা নিরূপণে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যে ব্যক্তিগত ব্যয় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। সরকারি হিসাব বলছে, প্রতি ১০০ টাকা ব্যয়ে ৭০ টাকাই মানুষকে নিজের পকেট থেকে খরচ করতে হয়, যার ৬৫ টাকা যায় শুধু ওষুধ কেনায়। ফলে সরকারি ফার্মেসি নেটওয়ার্ক চালু হলে চিকিৎসা ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের একমাত্র ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইডিসিএলকে আরও আধুনিক ও উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারখানা আধুনিকীকরণ, মাননিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির উন্নয়ন ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। নতুন যন্ত্রপাতি কেনা ও অপ্রয়োজনীয় জনবল ছাঁটাইয়ের কাজ চলছে।
২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ হচ্ছে। নতুন তালিকায় ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের ওষুধ যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে ওষুধের সংখ্যা ৩০০ ছাড়াতে পারে।
এ ছাড়া ওষুধের গুণগতমান ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেনেরিক নাম ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রচার ও মোড়ক খরচ কমানোরও সুপারিশ এসেছে। তবে অনেক ওষুধ শিল্প উদ্যোক্তা অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল (API) দেশের বাইরে থেকে আমদানি করায় ওষুধের নিরাপত্তা ও ব্যয় দুইই ঝুঁকিতে থাকে। তাই এই খাতে সরকারিভাবে বিনিয়োগ ও প্রণোদনার সুপারিশ এসেছে।
সব মিলিয়ে, সরকার যে উদ্যোগ নিচ্ছে, তা সফল হলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে এক বড় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ওষুধ হবে সহজলভ্য, সাশ্রয়ী এবং স্বাস্থ্যসেবা আরও মানবিক।